গলাচিপা পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর গলাচিপায়ী উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কবলে বেশ ক্ষয়ক্ষতির মাঝে অন্যতম একটি হলো মেম সাহেব নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ২০ মে আম্ফানের ঝড়ের তান্ডবে এ বিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে বিদ্ধস্থ হয়।
সরেজমিনে জানা যায় বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সবকটি শ্রেনিকক্ষ ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যায়। এখন তা পাঠদানের জন্য সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়ের জোড়াতালি দেওয়া টেবিল, বেঞ্চগুলোও ভেঙ্গে গেছে। সরকার যখন ক্লাস নেওয়ার জন্য অনুমতি দিবে তখন খোলা আকাশের নিচেই ক্লাস নিতে হবে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে শিক্ষার্থীরা।
মেম সাহেব নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে ১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিদ্যালয়টি। এখানে বর্তমানে মোট শিক্ষার্থী আছে ১২০ জন। ২২ বছরেও এখানে নির্মিত হয়নি পাকা ভবন। তিন কক্ষবিশিষ্ট টিনশেডের দুটি ঘর। একটি ঘর ভাঙ্গাচোরা। দরজা-জানালা ভাঙ্গাচোরা। স্থানীয়রা বলেন, আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে বিদ্যালয়ের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। জানি না কোন দিন ভবন আসবে কি না!
আমাদের ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার এক মাত্র ভরসা এই বিদ্যালয়টি। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন এই বিদ্যালয়টিতে একটি পাকা ভবন দেন তাহলে আমাদের সন্তানরা ভালো ভাবে পড়াশোনা করে দেশের শুনাম ধরে রাখতে পারে। স্থানীয় আ’লীগ নেতা আঃ লতিফ হাওলাদার জানান, বঙ্গোপসাগরের মুখে আগুণমুখা নদীর কাছে আমাদের এই উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিবছরই আম্ফানের মতো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হানা দেয়। যার ফলে প্রতিবছরই স্কুলটি মেরামত করা হয় বা অনেক সময় বাহিরেও খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করেন শিক্ষকরা। এইতো সিডর,
আয়লা মহসিনসহ প্রায়ই বন্যায় স্কুলটি ভেঙ্গে যায়। আমাদের এলাকায় এই বিদ্যালয়টির জন্য যদি একটা পাকা একাডেমিক ভবন দেয়া হয় এ সমস্যা রোধ করে শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়ন ফিরে আসবে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, বন্যার কবলে বিদ্যালয়ের সবগুলো শ্রেনি কক্ষ ভেঙ্গে যায়। এই বন্যা প্রবন এলাকায় টিনের বিদ্যালয় কয় দিন আর থাকে। বার বার সংস্কার কারা ছাড়া ক্লাস নেওয়া যায় না।
সরকার শিক্ষা কর্মকর্তাসহ উর্ধতন কর্মকর্তা যারা আছেন দয়া করে আমাদের দিকে একটু সুদৃষ্টি দেন তাহলে এখানে আমরা একটি পাকা ভবন পেতে পারি। তিনি আরো বলেনম বিদ্যালয়টিতে দূর-দূরান্তের পাঁচটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে।
২০০৭ সালে সিডরে ভেঙ্গে যাওয়ার পর সর্বশেষ বিদ্যালয়টিতে সংস্কার কাজ হয়। ভবন না থাকায় ঠিকমত পাঠদান করা যায় না। মেম সাহেব নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির জমি দাতা প্রতিষ্ঠাতা ওমর ফারুক ও নুর হোসেন মোল্লা। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম শরীফ এর সাথে যোগাযোগ করায় তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি নন-এমপিওভুক্ত বিধায় আমাদের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব জোড়া তালি দিয়ে চালাতে হয় কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কবলে তাও সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে যায়।
এবিষয়ে আমি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ বিষয়ে রতনদী তালতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে স্কুলটি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম মস্তফা বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়েছি এবং লিখিতভাবে জেলায় পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে গলাচিপায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মেম সাহেব নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে পড়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহিন শাহ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে স্কুলটি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। সরকারী ভাবে বরাদ্ধ দিয়ে আবার দাঁড় করে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হোক।